ভূমিকা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে গণ-অভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলন সবসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন যে, সরকারের অনেক উপদেষ্টা এখন তাদের নিজস্ব স্বার্থ ও নিরাপত্তার জন্য ‘সেফ এক্সিট’ বা নিরাপদ প্রস্থানের কথা ভাবছেন।
তিনি উল্লেখ করেন, এই উপদেষ্টাদের প্রতি আস্থা রাখা ছিল এক বড় ভুল। এই আস্থার কারণে সরকার ও গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্যগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাহিদ ইসলামের মন্তব্যের ভিডিও ও ফটোকার্ড দ্রুত ভাইরাল হয়েছে।
নাহিদ ইসলামের প্রেক্ষাপট
নাহিদ ইসলাম ২০১৩ সালের জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক দফা ঘোষণা করেছিলেন। এরপর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারে তিনি ছাত্র প্রতিনিধিরূপে তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হন।
গত ফেব্রুয়ারিতে তিনি এই পদ থেকে পদত্যাগ করে এনসিপির আহ্বায়ক হয়েছেন। তবে ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে উপদেষ্টা পদে থাকা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া এখনও দায়িত্বে আছেন।
উপদেষ্টাদের প্রতি আস্থা এবং প্রতারণা
নাহিদ ইসলাম বলেন:
-
অনেক উপদেষ্টা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে লিয়াজোঁ করেছেন।
-
তাদের লক্ষ্য ছিল ব্যক্তিগত স্বার্থ এবং নিরাপদ প্রস্থান।
-
এ কারণে গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি সরকারের সিদ্ধান্তে পুরোপুরি কাজে আসেনি।
-
সরকারের প্রথম ছয় মাসে বিভিন্ন প্রতিবিপ্লবমূলক চেষ্টা চলছিল, যা অনেক সমস্যার জন্ম দিয়েছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “যদি উপদেষ্টারা গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি ও সাধারণ মানুষের প্রতি যথাযথ আস্থা রাখত, তাহলে এই বিচ্যুতি ঘটত না।”
জাতীয় সরকার বনাম অন্তর্বর্তী সরকার
নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেন, “উপদেষ্টা হিসেবে অনেকেই সরকারের পদে যেতে চায়নি, বরং তারা জাতীয় সরকার গঠনের আহবান জানিয়েছিলেন। যদি তা হতো, ছাত্রদের দায়িত্ব নিতে হতো না।”
তিনি আরও বলেন, “৫ আগস্ট ক্যান্টনমেন্টে সেজদা দিয়েছেন রাজনৈতিক নেতারা, ছাত্ররা নয়। জাতীয় সরকার গঠনের মাধ্যমে আক্ষেপ তৈরি হতো না।”
সামাজিক মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া
নাহিদ ইসলামের মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ফেসবুক, টুইটার এবং অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিশেষ করে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ মানুষ বিষয়টিকে নিয়ে আলোচনায় লিপ্ত হয়েছেন।
-
পক্ষে: অনেকেই মনে করছেন, নাহিদ ইসলামের বক্তব্য সত্যিই বর্তমান সরকারের উপদেষ্টাদের আচরণ প্রতিফলিত করছে।
-
বিপক্ষে: কিছু ব্যবহারকারী বলছেন, এটি অতিরঞ্জিত ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মন্তব্য।
রাজনৈতিক প্রভাব
উপদেষ্টাদের নিরাপদ প্রস্থানের চিন্তা শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থ নয়, বরং দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকেও প্রভাবিত করতে পারে। নাহিদ ইসলাম মনে করেন, এটি গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি ও সাধারণ মানুষের প্রতি আস্থা হ্রাস করেছে।
-
সরকারের কার্যক্রমে বিভ্রান্তি
-
ছাত্র নেতৃত্বের দুর্বলতা
-
রাজনৈতিক দলের মধ্যে আস্থা হ্রাস
এই সব কারণে দেশের রাজনীতিতে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
FAQ (Frequently Asked Questions)
Q1: নাহিদ ইসলাম কে?
A: নাহিদ ইসলাম একজন বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ, যিনি এনসিপির আহ্বায়ক এবং ছাত্র আন্দোলনের সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।
Q2: ‘সেফ এক্সিট’ মানে কি?
A: এটি নিরাপদ প্রস্থান বা নিজের স্বার্থ রক্ষার উদ্দেশ্যে কোনো প্রতিষ্ঠান বা সরকার থেকে বের হয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা।
Q3: নাহিদ ইসলামের অভিযোগ কাদের বিরুদ্ধে?
A: তিনি মূলত সরকারের উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন যারা ব্যক্তিগত স্বার্থে লিয়াজোঁ করছে এবং গণ-অভ্যুত্থানের প্রতি আস্থা রাখছে না।
Q4: বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে কেমন প্রতিক্রিয়া পেয়েছে?
A: ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে পক্ষে-বিপক্ষে নানা প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই এটিকে বাস্তবসম্মত বলে মনে করছেন, আবার কিছু ব্যবহারকারী বলছেন এটি অতিরঞ্জিত।
উপসংহার
নাহিদ ইসলামের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, উপদেষ্টাদের মধ্যে ব্যক্তিগত স্বার্থ ও রাজনৈতিক লিয়াজোঁ গণ-অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ও সরকারের কার্যক্রমকে প্রভাবিত করছে। এটি ভবিষ্যতে সরকারের স্থায়িত্ব এবং ছাত্র-নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
No comments: