Subscribe Us

test

মধ্যবিত্তের বাসস্থানের অবস্থা ও সরকারের পদক্ষেপের অভাব

 


অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছরে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন সংস্থাগুলো কিছু সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নিয়েছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ (এনএইচএ) প্লট বরাদ্দে বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, দুর্নীতি তদন্ত, বিলাসবহুল ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল, শহীদ পরিবারের আবাসন প্রকল্প, নতুন উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।

তবে মধ্যবিত্ত নাগরিকদের আবাসন নিয়ে তেমন কোনো কার্যকর উদ্যোগ না থাকায় তাদের হতাশা আগের মতোই রয়ে গেছে।

বিশ্ব বসতি দিবস ২০২৫

আজ সোমবার উদযাপিত হচ্ছে বিশ্ব বসতি দিবস, যা ১৯৮৬ সাল থেকে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি নিরাপদ নগর এবং মানসম্মত বাসস্থান বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য জাতিসংঘ কর্তৃক প্রবর্তিত।

অভিজ্ঞদের মতামত

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর অঞ্চল ও পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মোহাম্মদ খান বলেন,

“দেশের অর্থশালী মানুষ ইতিমধ্যেই আবাসন খাতকে নিরাপদ ও লাভজনক বিনিয়োগ হিসেবে ধরে নিয়েছে। বাড়ি বা ফ্ল্যাটের মালিক হয়ে তারা মাসিক বড় অঙ্কের ভাড়া পাচ্ছেন।”

তিনি আরও বলেন,

“ভাসমান বা বস্তিবাসীর জন্য কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে বলে শোনা যায়, কিন্তু বাস্তবায়ন হচ্ছে না। অতীতে কিছু প্রকল্পেও দলীয় আধিপত্যের কারণে প্রকৃত ভাসমান বা বস্তিবাসী বঞ্চিত হয়েছেন।”

ঢাকার আবাসন প্রকল্পে সমস্যা

রাজউক সূত্রে জানা যায়, ঢাকার পূর্বাচল, ঝিলমিল, উত্তরা (প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় ধাপে) আবাসন প্রকল্পে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং লটারিতে বিভিন্ন ব্যক্তিকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। উত্তরা অ্যাপার্টমেন্টের ফ্ল্যাটগুলো উচ্চমূল্যের কারণে নিম্নবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত নাগরিকদের নাগালের বাইরে।

গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থাগুলোও বিভিন্ন আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে, কিন্তু অধিকাংশ ফ্ল্যাটের উচ্চমূল্যজনিত কারণে সাধারণ নাগরিকরা সুবিধা নিতে পারছেন না। প্রধান সুবিধাভোগী হচ্ছে শহরে বসবাসরত সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী এবং সম্পদশালী ব্যক্তি।

ভাসমান ও বস্তিবাসী মানুষ

‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’ অনুযায়ী, দেশে ভাসমান মানুষের সংখ্যা ২২,১১৯ এবং বস্তিবাসী মানুষের সংখ্যা ১৮,৪৮৬০০০। তারা টিনের ঘর, সেমিপাকা বা ঘিঞ্জিপাকা ঘরে বসবাস করেন। তাদের জন্য এখনও কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।

বিশেষ মন্তব্য: প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস

বিশ্ব বসতি দিবসে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,

“বাংলাদেশে যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব বসতি দিবস-২০২৫ উদযাপিত হচ্ছে। এবারের জাতিসংঘ নির্ধারিত প্রতিপাদ্য ‘আরবান ক্রাইসিস রেসপন্স’ (পরিকল্পিত উন্নয়নের ধারা, নগর সমস্যায় সাড়া) অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং তাৎপর্যপূর্ণ।”

উপসংহার

মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত নাগরিকদের জন্য বাসযোগ্য ও সাশ্রয়ী আবাসন এখনো সীমিত। সরকারের উদ্ভাবিত উদ্যোগ থাকলেও বাস্তবায়ন পর্যাপ্ত নয়। শহরের ভাসমান ও বস্তিবাসীর জন্য নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা এখন সময়ের দাবি।

No comments:

Powered by Blogger.